ডেইলি নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমঃবেশ কয়েক বছর ধরেই সফলতা পাচ্ছে নারী ফুটবল। গেল এক দশকে আট বয়সভিত্তিক আসরের পাঁচটিতেই শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ, বাকি তিনটিতে হয়েছে রানার্সআপ। সফলতা আসছে সিনিয়র পর্যায়েও। সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও শিরোপা জিতেছে সাবিনা-কৃষ্ণারা। আর দুধের মাছির মতো কর্মকর্তারাও ভনভন করছে দলটির আশেপাশে। তাদের সুযোগ দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ দলের উপেক্ষিত হয়েছেন গোলরক্ষক কোচ মাসুদ আহমেদ উজ্জ্বল। এর আগে বিভিন্ন সময়ে উপেক্ষিত হন নারী দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও মাহবুবুর রহমান লিটু। নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরার দিনও হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকে দাঁড় করিয়ে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন বাফুফের কর্তারা।
ঘটনা ১. ২০১৭ সালের ২২শে জানুয়ারি। হঠাৎ নারী দলের ক্যাম্প ছাড়েন গোলাম রব্বানী ছোটন। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন মাহবুবুর রহমান লিটু।
ওইদিন বিকালে এনভয় গ্রুপের সংবর্ধনায়ও যোগ দেননি তারা। পরে জানা যায় সকালের প্র্যাকটিস সেশনে ছোটনের কোচিং জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল থমাস স্মলি ও গোলরক্ষক কোচ রায়ান স্যান্ডফোর্ড। অথচ কোচ ছোটনের অধীনে তখনই দুবার এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক পর্বের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব উতরিয়ে দলকে তুলেছিলেন চূড়ান্ত পর্বে। সিনিয়র সাফ চ্যাস্পিয়নশিপেও বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলেছিলেন ছোটন। এতোসব অর্জনের পরও নারী দলের অনুশীলনে হাজির হয়ে খবরদারি করতেন স্মলি। মেয়েদের সামনে নানা ভাবে অপমান করতেন ছোটনকে। তাই ক্যাম্প ছেড়েছিলেন ছোটন। যদিও পরে ছোটন ও লিটুকে ম্যানেজ করে ক্যাম্পে ফেরায় বাফুফে।
ঘটনা ২. ২২শে ডিসেম্বর ২০২১। ওইদিন ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে বাংলাদেশ। সাফের নিয়ম অনুযায়ী ২৩ জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে ডাগআউটে ছিলেন সাত কর্মকর্তা। টিম ডিরেক্টরকে সুযোগ দিতে গিয়ে সাত অফিসিয়ালের তালিকা থেকে বাদ পরেন দলটির সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু। তালিকায় নাম না থাকায় চ্যাম্পিয়ন পদকও জোটেনি তার কপালে। তখনই রাগে দুঃখে মাঠের এক কোনায় গিয়ে বসে থাকেন লিটু। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে কাছে ডেকে নেন দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। গলায় জড়িয়ে দেন নিজের মেডেল।
ঘটনা ৩. ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২২। প্রথমবারের মতো নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গত বছরের ওইদিন দেশে ফেরে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দল। ছাদখোলা বাসে সাবিনা-কৃষ্ণাদের রাজসিক সংবর্ধনা দেয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বিমানবন্দরে নানা আয়োজনে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়। সেখান থেকে মেয়েদের নেয়া হয় বাফুফে ভবনে। সেখানে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয় বাংলাদেশ দল। তবে সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায় বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ বাফুফের ডজন খানেক কর্মকর্তা সামনে চেয়ারে বসে থাকলেও পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাফজয়ী নারী দলের কোচ গোলাম রব্বানী, অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ আরও কয়েকজন ফুটবলার। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে।
ঘটনা ৪. ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩। মেয়েদের জাতীয় দল থেকে শুরু করে বয়সভিত্তিক সব দলের গোলরক্ষক কোচ মাসুদ আহমেদ উজ্জ্বল। বাফুফের বেতনভুক্ত কোচদেরও একজন। বাফুফের পুরুষ দলের গোলরক্ষক কোচ বিপ্লব ভট্টাচার্য চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় বয়সভিত্তিক পুরুষ দলগুলোর দায়িত্বেও আছেন তিনি। গোলরক্ষক রুপনা চাকমার কাছ থেকে একের পর এক টুর্নামেন্টে সেরাটা বের করে আনার কৃতিত্বও তার। কিন্তু স্বীকৃতির প্রশ্নে রইলেন উপেক্ষিত। বাংলাদেশ দল যখন শিরোপা উৎসব করেছে মঞ্চে, তখন একরকম অপমানই হতে হয় তাকে। বাফুফে কর্মকর্তাদের মঞ্চে ওঠার সুযোগ করে দিতেই কেটে দেওয়া হয় উজ্জ্বলের নাম। পুরস্কার বিতরণীর সময় দেখা গেল, পদক তালিকায় উঠে গেছে টিম লিডার জাকির হোসেন চৌধুরী ও দুই সহকারী ম্যানেজার টিপু সুলতান এবং নুরুল হোসেনের নাম। অথচ মাসুদের নামটা রাখা হয়নি! লজ্জায়-অপমানে মাঠ ছেড়ে গেলেও পরে ফুটবলারদের অনুরোধে ফেরেন পুরস্কার বিরতণী শেষ হওয়ার পর।